logo
নোয়াখালীতে নিবন্ধিত অর্ধেকেরও কম জেলে পাবেন সরকারি চাল

নোয়াখালীতে নিবন্ধিত অর্ধেকেরও কম জেলে পাবেন সরকারি চাল

noakhalihatiyalocal

ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৩ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা ও সংলগ্ন নদ-নদী এবং সাগরে ইলিশসহ সবধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। তবে এই সময়ে জীবিকা হারানো জেলেদের জন্য সরকারি ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ থাকলেও নোয়াখালীর নিবন্ধিত জেলেদের অর্ধেকেরও কম পরিবার এ সহায়তা পাচ্ছে। মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নোয়াখালী জেলার মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ২২ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১৫৪ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার ৭৮৩ পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। ফলে অর্ধেকেরও বেশি জেলে পরিবার সরকারি সহায়তার বাইরে থেকে যাচ্ছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, ইলিশ প্রজনন রক্ষায় প্রতিবছরই সরকার নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সময়ে জেলেদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা হিসেবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ করা হয়। এ বছর নোয়াখালী জেলায় বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪৯৪ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন চাল, যা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। তবে বাস্তবে অনেক জেলে অভিযোগ করেছেন, ভিজিএফ তালিকায় অসহায় ও প্রকৃত জেলেরা বাদ পড়ছেন, আর অনেক অপ্রকৃত ব্যক্তি সুবিধাভোগীর তালিকায় উঠে আসছেন। ফলে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর শঙ্কায় রয়েছেন তারা। হাতিয়ার জেলে আবদুল মান্নান বলেন, যারা নদীতে যায় না তাদের নামে জেলে কার্ড। আমরা নদী-সাগরে যুদ্ধ করি, অথচ আমাদের জেলে কার্ড নাই। আমরা বৈষম্যের শিকার হই। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমরা নদীতে নামতে পারব না, ঘরে খাবারও নেই। তালিকায় নাম না থাকায় সরকারি চালও পাব না। এখন পরিবার নিয়ে কীভাবে টিকব বুঝতে পারছি না। আমরা কেউ রিকশা চালিয়ে অথবা কেউ জাল-নৌকা মেরামত করে দিন কাটাচ্ছি। আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের আরেক জেলে বলেন, এবার সাগর-নদীতে ছিল ইলিশের অকাল। পুরো মৌসুমজুড়ে জেলেদের জালে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়েনি। এরমধ্যেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় এবার অভাব-অনটনের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। ধারদেনা করে নদীতে নৌকা ভাসিয়েছি। কিন্তু মৌসুম শেষে তাদের খরচও ওঠেনি। সরকারি ভাতা যেটা দেওয়ার কথা সেটাও আমরা পাবো কিনা তার নিশ্চয়তা নাই। অনেক সময় অভিযান শেষের দিকে চাল দেওয়া হয় এতে আমাদের কোনো লাভ হয় না। চাল বিতরণ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হোক। কেফায়েত উদ্দিন নামের আরেক জেলে বলেন, কয়েক বছর ধরেই তেমন মাছ নেই। আমরা জেলেরা অভাব-অনটনে আছি। সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তাও যৎসামান্য। আবার অনেক প্রকৃত জেলেরা সহায়তাও পায় না। জেলেদের প্রতি সরকারের আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধনকৃত জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু একটি পরিবারে শুধু চাল দিয়ে কিছুই হয় না। আনুষাঙ্গিক অনেক কিছুই তো লাগে। তাই এ নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা কীভাবে চলবো, সে দুশ্চিন্তায় আছি। মো. রিপন উদ্দিন নামের আরেক জেলে বলেন, আমরা সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে নামি না। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে ভারতীয় ফিশিং বোটগুলো বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছে। তারা মা ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমরা খালি হাতে ঘরে বসে আছি। এতে আমাদের কষ্ট আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমরা যদি আইন মানি, কিন্তু অন্য দেশের জেলেরা এসে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়—তাহলে ইলিশ রক্ষার এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে? মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, ইলিশ রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও জেলেদের পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত না হলে তাদের জীবন অতিবাহিত করা কঠিন হয়ে যায়। শুধু সংসার চালানোর খরচ নয়, জাল ও নৌকা তৈরি করতে ঋণের চাপও সামাল দিতে হয় জেলেদের। ইলিশ রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও জীবিকার নিরাপত্তা ছাড়া হাজারো জেলে পরিবারের মুখে আবারও অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান আগামী ২৫ অক্টোবর শেষ হবে। এ সময়টাতে মেঘনা নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক জেলে পরিবারকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এবারও বরাদ্দ সীমিত হওয়ায় সব জেলেকে সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১৫৪ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার ৭৮৩ পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ইলিশ ধরা ঠেকাতে এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট, জেল জরিমানা ও ট্রলার জব্দ অভিযান জোরদার করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মৎস্য সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হলে ইলিশের প্রাচুর্যতা বাড়বে। যা জেলেদের মুখে হাসি ফোটাবে এবং বাজারেও সাড়া ফেলবে।

Yeamin Hossain

Yeamin Hossain

৭ অক্টোবর, ২০২৫