
বাংলাদেশের জনগণ এখন নির্বাচনের ট্রেনে উঠে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাহবুবের রহমান শামীম। রোববার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে হাতিয়ার বুড়িচর শহীদ আলী আহমেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাতিয়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শামীম বলেন, সারাদেশের মানুষ ভোট দিতে উদগ্রীব। নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে, সেই ট্রেনে বাংলাদেশের জনগণ উঠে পড়েছে অলরেডি। মাঠে-মাঠে, রাস্তায়-রাস্তায় মানুষের ঢল প্রমাণ করে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ধানের শীষকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে জনগণ। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে বানচাল করতে একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব অপচেষ্টা মোকাবিলা করতে হবে। হাতিয়ার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শামীম বলেন, গত ১৭ বছরে হাতিয়া দ্বীপ বঞ্চনার শিকার হয়েছে। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজির কারণে মানুষ কষ্টে ছিল। বিএনপি সরকার গঠন করলে নৌপথ, সড়ক, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সংস্কার করা হবে। হাতিয়ার পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এটিকে সারা দেশের মধ্যে একটি রোল মডেল করা হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে নদীভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। হাতিয়ায় উন্নত হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। নৌ ও সড়ক যোগাযোগ উন্নত করে মানুষের দুর্ভোগ কমানো হবে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সদস্য এ কে এম ফজলুল হক খোকন। বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুন উর রশিদ আজাদ এবং হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলা উদ্দিন, সাবেক সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক খোকন, সাবেক সহ-সভাপতি মাসউদুর রহমান বাবর, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হায়দার সাজ্জাদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল্লাহিল মজিদ নিশানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সমাবেশস্থলে দুপুর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও মিছিল নিয়ে মাঠে আসতে থাকেন। একেক ইউনিয়নের মিছিল একেক রঙে মুখরিত ছিল। এতে সমাবেশস্থলে হাজারো নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পুরো মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদে কর্মকর্তার অনিয়মের ফিরিস্তি টাঙিয়ে দিলেন এলাকাবাসী। এতে তিনি কোন কোন খাতে ঘুষ গ্রহণ করেন তা পরিমাণসহ উল্লেখ করা হয়। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হরণী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং পরিষদকেন্দ্রিক জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবিতে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ উত্তর শাখার সভাপতি মো. আবুযর গিফারী সুমন, হরণী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি তারিকুল মাওলা, জাতীয় নাগরিক পার্টির সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ইউনিয়ন সভাপতি ইলিয়াস গাজী, বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল এহসান জুয়েল, কৃষকদল হাতিয়া উত্তর শাখার সভাপতি হুমায়ুন কবির, যুব আন্দোলনের সভাপতি আসাদুল্লাহ গালিব, ছাত্রদলের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি মো. রাসেল মাহমুদ। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সেবা- ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, জেলে চাল, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধনসহ প্রায় সব ধরনের সুবিধার বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করছেন। সদ্য চালু হওয়া অনলাইনভিত্তিক ভিজিডি রেজিস্ট্রেশনেও দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, সচিবের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহুবার স্থানীয় প্রশাসন ও উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে দাবি করেন তারা। এসময় বক্তারা তিনটি দাবি তুলে ধরেন- সচিবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে জরুরি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত সচিবকে দ্রুত অপসারণ করে দুর্নীতিমুক্ত পরিষদ পরিচালনা নিশ্চিত করা। মানববন্ধনে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হবেন। হরণী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের মতামত জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, আমরা বিষয়গুলো জেনেছি। জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ৬০০ পরিবারকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার অনুদান তুলে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর হাতে এই অনুদান তুলে দেওয়া হয়। জানা গেছে, হাতিয়ায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একযোগে ৬০০ নিম্নবিত্ত পরিবারকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার অনুদান দিয়েছে বেসরকারি দাতব্য সংস্থা আল-মানাহিল ফাউন্ডেশন। প্রতিটি পরিবারকে নগদ এককালীন ২০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়।আব্দুল হান্নান মাসউদের অনুরোধে আল-মানাহিল ফাউন্ডেশন পূর্বে প্রস্তুত করা তালিকার ভিত্তিতে এই অর্থ সহায়তা প্রদান করে। মাসউদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কেবল সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত দ্বীপ হাতিয়ার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য আমি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছি। তারা আগামীতে হাতিয়ার অবকাঠামোগত ও আর্থিক উন্নয়নে আরও সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “সংস্থাটি সারাদেশে মোট ১ হাজার ৫৫৫ জনকে সহায়তার জন্য নির্বাচিত করলেও, আমার উদ্যোগে শুধু হাতিয়া উপজেলাতেই ৬০০ জনকে নগদ অনুদান প্রদান করা হয়। আশাকরি সামান্য সামান্য সহযোগীতা আপনাদের অনেক দূর এগিয়ে নিবে। এই উদ্যোগ হাতিয়ার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে আশার আলো জ্বালাবে এবং ভবিষ্যতে আরও এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবের রহমান শামীম বলেছেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে নিয়ে ষড়যন্ত্র মানে তারেক রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্র। যারা নির্বাচনকে বানচাল বা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে তাদের নির্বাচনে ভরাডুবি হবে। এসব জেনেই তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজ নির্বাচনী এলাকা হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আজকে বাংলাদেশ, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণের প্রচেষ্টায় সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। জনগণের ভোটাধিকার যারা বাধাগ্রস্ত করবে জনগণ তাদের রুখে দেবে। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ভোট দেওয়ার জন্য সারা দেশের মানুষের উদ্গ্রীব হয়ে আছে। যতই ষড়যন্ত্র হোক, আমরা আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে নির্বাচনকে বানচাল করা যাবে না। জনগণ ভোটে নেমে পড়েছে, ভোটের ট্রেনে জনগণ উঠে গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি অঞ্চলে মিছিল মিটিং হচ্ছে। হরিণী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আখতারুজ্জামান দোলনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলা উদ্দিন, সাবেক সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক খোকন, সাবেক সহসভাপতি মাসউদুর রহমান বাবর, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হায়দার সাজ্জাদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল্লাহিল মজিদ নিশান।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৩৭টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তালিকা প্রকাশ করেন। তালিকায় নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল—হাতিয়া আসনটি বিএনপির পরিবর্তে জোটের শরিক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদকে দেওয়া হতে পারে। তবে ঘোষিত তালিকায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মাহবুবের রহমান শামীমের নাম আসায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদিকে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নে আনন্দ মিছিল করেছেন ধানের শীষের সমর্থকরা, অন্যদিকে এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়ার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে শামীমের সমর্থনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে আসা হান্নান মাসউদের পক্ষের নেতাকর্মীরা বলছেন, জোটের আসন সমঝোতায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে আশা করেছিলেন তারা। স্থানীয় বিএনপি সমর্থক রাসেল উদ্দিন বলেন, তারেক রহমান বলেছিলেন, “মনোনয়ন পাবেন তারা, যারা মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত।” কিন্তু আজ বুঝলাম, রাজনীতিতে জনগণের মূল্য এক টাকার নোটের চেয়েও কম। আজ হাতিয়ার জন্য দুঃসংবাদ। এখন আশার নাম শুধু আবদুল হান্নান মাসউদ। হাতিয়ার উন্নয়নের জন্য আপনাকেই মাঠে চাই। আরেক সমর্থক রুবেল উদ্দিন রবি বলেন, ধানের শীষ প্রতীক যে বহন করবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। তবে চাই এমন কাউকে প্রার্থী করা হোক, যিনি ত্যাগী ও সৎ। শামীম ভাই তেমনই একজন মানুষ। সবাই মিলে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব, ইনশাআল্লাহ। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিএনপি মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কোনো চমক আনতে পারেনি। বরং সাবেক এমপিদের প্রাধান্যই দিয়েছে। অনেক বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত ব্যক্তিও তালিকায় রয়েছেন। তরুণ প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্ব হতাশাজনক। এ বিষয়ে নোয়াখালী-৬ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপি জোটের শরিকদের জন্য কিছু আসন রেখে ২৩৭ আসনের তালিকা প্রকাশ করেছে। মানুষ ধানের শীষে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। ১৭ বছর পর ধানের শীষের জয় হবেই। আমরা উন্নত হাতিয়ার গড়তে কাজ চালিয়ে যাব। একই বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমি সবসময় অসহায় মানুষের পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ। হাতিয়ার নদীভাঙন রোধে আমি প্রাণপণ লড়ছি, এই লড়াই চলবে। আমার শক্তি জনগণ—তাদের রায়কেই আমি শ্রদ্ধা করবো।

স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ায় কাঠের সেতু নির্মাণ করেছেন বিএনপি নেতা প্রকৌশলী তানভীর উদ্দিন রাজিব। চানন্দী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৌলভী গ্রামে প্রায় ৫০ ফুট লম্বা কাঠের সেতুটি স্থানীয়দের অংশগ্রহণে নির্মাণ করা হয়। হাতিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মৌলভী গ্রামে খালের ওপর দিয়ে পারাপারের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে প্রতিদিনই চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠত। বিষয়টি প্রকৌশলী তানভীর উদ্দিন রাজিবকে জানালে তিনি দ্রুত সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থানীয় বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এখন নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারবে। রাজিব সাহেবের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর উদ্দিন রাজিব বলেন, দীর্ঘদিন এখানে কোনো সেতু না থাকায় স্থানীয়দের যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর আমি নিজ উদ্যোগে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু করি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এবং সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সবসময় জনগণের পাশে থাকতে চাই।

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সূর্যমুখী ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সারসহ ৯ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে কোস্টগার্ড। মিয়ানমার থেকে মাদকের বিনিময়ে এসব সার পাচার হচ্ছিল বলে জানা গেছে। রোববার (২ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক। এর আগে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বিসিজি স্টেশন হাতিয়া একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। তারপর শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে তাদের হাতিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, একটি অসাধু চক্র বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য মিয়ানমার থেকে দেশে আনছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ১টার দিকে সূর্যমুখী ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সন্দেহভাজন তিনটি বোটে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ১৯৪ বস্তা রাসায়নিক সার, পাচার কাজে ব্যবহৃত তিনটি বোট এবং ৯ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। আরও জানা যায়, আটক সারের চালান অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে বহন করা হচ্ছিল। জব্দ করা সার, বোট ও আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাতিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, ১ হাজার ১৯৪ বস্তা সার, ৯ জন পাচারকারী ও জব্দকৃত ৩টি ট্রলারসহ হাতিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। কোস্টগার্ড বাদী হয়ে তাদের নামে মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। চোরাচালান রোধে ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মৎস্য বিভাগের অভিযানে ৪টি ট্রলারসহ প্রায় ১৫ মণ ইলিশ মাছ জব্দ ও ৫০ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে মেঘনা নদীতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় অভিযানে মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও এতে অংশ নেন। অভিযান সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চারটি ট্রলারের জেলেরা মেঘনা নদীতে মাছ ধরছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড যৌথ অভিযান চালিয়ে চারটি ট্রলারসহ ৫০ জন জেলেকে আটক করে এবং ট্রলারগুলো থেকে প্রায় ১৫ মণ ইলিশ মাছ জব্দ করে। পরে জব্দকৃত মাছগুলো উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফাহাদ হাসান বলেন, আটক জেলেদের ১ লাখ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদী ও সাগরে নামতে পারবে, কিন্তু তারা একদিন আগে নামায় জরিমানার মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে মা ইলিশ ধরা পড়লে আগামী বছরের উৎপাদন কমে যাবে।

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নোয়াখালীর হাতিয়ায় মৎস্য বিভাগের অভিযানে প্রায় ২ টন ইলিশ মাছ জব্দ এবং ৪৬ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের ভাসানচর এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। এ সময় নৌ-পুলিশের একটি দল এবং মৎস্য দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযান সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থেকে আসা পাঁচটি ট্রলারের জেলেরা ভাসানচর এলাকায় মাছ ধরছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচটি ট্রলারসহ ৪৬ জন জেলেকে আটক করা হয় এবং ট্রলারগুলো থেকে প্রায় ২ টন ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। পরে মঙ্গলবার দুপুরে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন জব্দকৃত মাছগুলো উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করেন। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন বলেন, আটক জেলেদের মধ্যে ৪১ জনকে ২ হাজার টাকা করে মোট ৮২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ জনের বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় এমন অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে বলেও তিনি জানান। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এ সময়ে ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ সময়ে মা ইলিশ বা জাটকা ধরা হলে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন কমে যাবে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জেলেরা নিজেরাই। তাই বড় আকারের ইলিশ উৎপাদনের স্বার্থে সবাইকে এ সময়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

সাজানো হয়েছে কনের বাড়ি। চলছে রান্নাবান্না আর অতিথি আপ্যায়নের তোড়জোড়। গাড়িবহর নিয়ে বরযাত্রীও এসে পৌঁছেছে। সবাই অপেক্ষায়- কখন হবে আকদ, কখন শুরু হবে বরযাত্রীদের আপ্যায়ন। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেলেও শুরু হয়নি বিয়ের কাজ। কাজী বসে আছেন। অতিথিদের মধ্যে গুঞ্জন আর হইচই। অবশেষে জানা গেল- বর কবুল বলবেন না, যদি না তার প্রিয় বন্ধু আসে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে। পরে ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলছেন- এমন বন্ধুত্ব আজকাল বিরল। যার জন্য বর নিজের বিয়েই থামিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের করিম বেপারীর ছেলে আরমান হোসেনের বিয়ে ঠিক হয় তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে। দুপুরের আগে বরযাত্রী রওনা হওয়ার সময় আরমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিয়াজের সঙ্গে গাড়িতে বসা নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এতে রাগ করে বিয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রিয়াজ। বরযাত্রী কনের বাড়িতে পৌঁছানোর পর বর বন্ধুকে না দেখে গাড়ি থেকে নামতেই অস্বীকৃতি জানান। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী বহু অনুরোধ করলেও তিনি অনড় থাকেন। স্পষ্ট জানিয়ে দেন- ‘রিয়াজ না আসলে কবুল বলব না।’ অবশেষে প্রায় দুই ঘণ্টা পর বরপক্ষের লোকজন গিয়ে বন্ধুকে নিয়ে আসেন। এরপরই আরমান হাসিমুখে মঞ্চে বসে ‘কবুল’ বলেন এবং বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান রানা বলেন, দারুণ এক বন্ধুত্বের বন্ধন দেখলাম আজ। এমন আজব, আবার হৃদয়ছোঁয়া এক বিয়ের অনুষ্ঠান জীবনে প্রথম দেখলাম। আমি ছিলাম অতিথি- ভাবিনি বন্ধুর অনুপস্থিতিতে বর কবুল বলা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু সে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, প্রিয় বন্ধুকে ছাড়া জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। শেষ পর্যন্ত সবাই নিরুপায় হয়ে বন্ধুকে ডেকে আনে, আর তার উপস্থিতিতেই সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সত্যিই এমন বন্ধুত্ব আজকাল খুব বিরল কনেপক্ষের আত্মীয় আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা দুপুর ১২টা থেকেই খাওয়ানো শুরু করি। বর আসে দেড়টার দিকে। কিন্তু এক বন্ধুর জন্য দুই ঘণ্টা বিয়ের কাজ বন্ধ ছিল। অনেক অতিথি রাগ করে চলে গেছেন। পরে বন্ধুকে এনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনের মামা সেলিম হোসেন বলেন, এমন ঘটনা জীবনে দেখিনি। সবাই দাওয়াত খেয়ে অপেক্ষা করছে, কাজি সাহেব বসে আছেন, কিন্তু বর কবুল বলছে না। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে শুনলাম বন্ধুর জন্য বসে আছে। শেষমেশ সেই বন্ধুই আসায় বিয়ে সম্পন্ন হলো। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল গফুর মিয়া বলেন, এই ছেলেটার বন্ধুত্ব দেখে আমরা অবাক। আজকাল বন্ধুরা এতটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু আরমান যা করেছে, তাতে বোঝা যায় বন্ধুত্ব এখনো অনেকের কাছে মনের সম্পর্ক। তবে বিয়ের দিনে এমন নাটক না হলেই ভালো হতো। এ বিষয়ে বর আরমান হোসেন বলেন, রিয়াজ আমার ছোটবেলার বন্ধু। এক আত্মীয়ের সঙ্গে গাড়িতে বসা নিয়ে রাগ করে বিয়েতে আসেনি সে। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনে সে থাকবে না- এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই ও আসার পরই বিয়ে করেছি।

ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৩ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা ও সংলগ্ন নদ-নদী এবং সাগরে ইলিশসহ সবধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। তবে এই সময়ে জীবিকা হারানো জেলেদের জন্য সরকারি ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ থাকলেও নোয়াখালীর নিবন্ধিত জেলেদের অর্ধেকেরও কম পরিবার এ সহায়তা পাচ্ছে। মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নোয়াখালী জেলার মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ২২ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১৫৪ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার ৭৮৩ পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। ফলে অর্ধেকেরও বেশি জেলে পরিবার সরকারি সহায়তার বাইরে থেকে যাচ্ছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, ইলিশ প্রজনন রক্ষায় প্রতিবছরই সরকার নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সময়ে জেলেদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা হিসেবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ করা হয়। এ বছর নোয়াখালী জেলায় বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪৯৪ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন চাল, যা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। তবে বাস্তবে অনেক জেলে অভিযোগ করেছেন, ভিজিএফ তালিকায় অসহায় ও প্রকৃত জেলেরা বাদ পড়ছেন, আর অনেক অপ্রকৃত ব্যক্তি সুবিধাভোগীর তালিকায় উঠে আসছেন। ফলে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর শঙ্কায় রয়েছেন তারা। হাতিয়ার জেলে আবদুল মান্নান বলেন, যারা নদীতে যায় না তাদের নামে জেলে কার্ড। আমরা নদী-সাগরে যুদ্ধ করি, অথচ আমাদের জেলে কার্ড নাই। আমরা বৈষম্যের শিকার হই। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমরা নদীতে নামতে পারব না, ঘরে খাবারও নেই। তালিকায় নাম না থাকায় সরকারি চালও পাব না। এখন পরিবার নিয়ে কীভাবে টিকব বুঝতে পারছি না। আমরা কেউ রিকশা চালিয়ে অথবা কেউ জাল-নৌকা মেরামত করে দিন কাটাচ্ছি। আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের আরেক জেলে বলেন, এবার সাগর-নদীতে ছিল ইলিশের অকাল। পুরো মৌসুমজুড়ে জেলেদের জালে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়েনি। এরমধ্যেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় এবার অভাব-অনটনের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। ধারদেনা করে নদীতে নৌকা ভাসিয়েছি। কিন্তু মৌসুম শেষে তাদের খরচও ওঠেনি। সরকারি ভাতা যেটা দেওয়ার কথা সেটাও আমরা পাবো কিনা তার নিশ্চয়তা নাই। অনেক সময় অভিযান শেষের দিকে চাল দেওয়া হয় এতে আমাদের কোনো লাভ হয় না। চাল বিতরণ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হোক। কেফায়েত উদ্দিন নামের আরেক জেলে বলেন, কয়েক বছর ধরেই তেমন মাছ নেই। আমরা জেলেরা অভাব-অনটনে আছি। সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তাও যৎসামান্য। আবার অনেক প্রকৃত জেলেরা সহায়তাও পায় না। জেলেদের প্রতি সরকারের আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধনকৃত জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু একটি পরিবারে শুধু চাল দিয়ে কিছুই হয় না। আনুষাঙ্গিক অনেক কিছুই তো লাগে। তাই এ নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা কীভাবে চলবো, সে দুশ্চিন্তায় আছি। মো. রিপন উদ্দিন নামের আরেক জেলে বলেন, আমরা সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে নামি না। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে ভারতীয় ফিশিং বোটগুলো বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছে। তারা মা ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমরা খালি হাতে ঘরে বসে আছি। এতে আমাদের কষ্ট আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমরা যদি আইন মানি, কিন্তু অন্য দেশের জেলেরা এসে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়—তাহলে ইলিশ রক্ষার এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে? মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, ইলিশ রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও জেলেদের পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত না হলে তাদের জীবন অতিবাহিত করা কঠিন হয়ে যায়। শুধু সংসার চালানোর খরচ নয়, জাল ও নৌকা তৈরি করতে ঋণের চাপও সামাল দিতে হয় জেলেদের। ইলিশ রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও জীবিকার নিরাপত্তা ছাড়া হাজারো জেলে পরিবারের মুখে আবারও অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান আগামী ২৫ অক্টোবর শেষ হবে। এ সময়টাতে মেঘনা নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক জেলে পরিবারকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এবারও বরাদ্দ সীমিত হওয়ায় সব জেলেকে সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১৫৪ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার ৭৮৩ পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ইলিশ ধরা ঠেকাতে এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট, জেল জরিমানা ও ট্রলার জব্দ অভিযান জোরদার করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মৎস্য সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হলে ইলিশের প্রাচুর্যতা বাড়বে। যা জেলেদের মুখে হাসি ফোটাবে এবং বাজারেও সাড়া ফেলবে।

নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ছাইফ উদ্দিনকে (৫৯) গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে হাতিয়া আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরের পর থেকেই যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আদালত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। বিকেলে ছাইফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত হলে তাকে ঘিরে ধরে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার পরপরই উপজেলা সদরের ওছখালী বাজারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা ছাইফ উদ্দিনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন এবং থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ছাইফ উদ্দিনকে বিকেলে উপজেলা সদর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে। মিছিলের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিছিলের চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

হাতিয়া প্রতিনিধি ইলিশ প্রজনন মৌসুমে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনেই নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাটে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। সাধারণত এই সময়ে ঘাটে থাকে জেলেদের হাকডাক, মাছ বিক্রির ধুম। কিন্তু আজ তা নেই। দুই-তিনজনকে দেখা গেলেও তারা ব্যস্ত ছিলেন আড়ৎ ধোয়া-মোছার কাজে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত টানা ২২ দিন ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই আইন অমান্য করলে মৎস্য আইনে রয়েছে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণে জেলেদের সহযোগিতা প্রশংসনীয়। আব্দুর রহিম নামে এক জেলে বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা মানার কারণে ইলিশের সংখ্যা বাড়ে। আমরা জানি দীর্ঘমেয়াদে এটা আমাদের উপকার করবে। তবে সামান্য অসুবিধা হচ্ছে, আয় বন্ধ থাকায় সংসার সামলানো কঠিন। কুতুবউদ্দিন বাবু নামে চেয়ারম্যান ঘাটের অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সচেতন আছি। আমাদের সাথে যারা জড়িত সকলকে সচেতন করেছি। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং মৎস্য বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শন চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে কেউ আইন অমান্য করতে না পারে। চেয়ারম্যান ঘাটের ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, আজ ঘাটে অনেকটা নীরবতা, শুধু ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। সবাই সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ইলিশ সংরক্ষণে কাজ করছে। আমরা চাই সবাই আইন মেনে ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করুক। সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মানস মন্ডল বলেন, নোয়াখালী সদর উপজেলার পৌর বাজার ও সোনাপুর বাজারের মাছ বাজার এবং আড়তে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানকালে ইলিশ মাছ না পাওয়া গেলেও শিং মাছের সঙ্গে রং মিশানোর ঘটনায় একজন বিক্রেতাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত মাছ বিনষ্ট করা হয়েছে। এমন ধরনের অভিযান ও মোবাইল কোর্ট ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, যা গ্রাহককে সঠিক ও সতেজ মাছ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা সফল করতে নদী ও সাগরে টহল অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই সবাই আইন মানুক, যাতে ইলিশের প্রজনন ও ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়।

মাছ শিকারে গিয়ে প্রায় চার মাস সাগরের মাঝে প্রকৃতির সঙ্গে একরকম লড়াই করেছেন নোয়াখালীর হাতিয়ার এমভি আহাদ-২ ট্রলারের ২১ জন জেলে। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ আর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়কে জয় করে তারা আহরণ করেছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ। অবশেষে ট্রলার নিয়ে তারা ফিরেছেন আপন ভিটেমাটিতে। তবে এবারের ফেরা একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে। পুরো ট্রলার সাজিয়ে, একই রকম পোশাক পরে, গান-বাজনা আর নেচে-গেয়ে উৎসবের আমেজে ঘরে ফিরেছেন তারা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই আইন অমান্য করলে মৎস্য আইনে রয়েছে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান। তাই এ সময়টুকু পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য ঘরে ফিরেছেন জেলেরা। হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, এমভি আহাদ-২ ট্রলারটিকে নানাভাবে সজ্জিত করে ফিরছেন জেলেরা। তাদের সবার গায়ে একই ধরনের পোশাক, মুখে হাসি আর চোখে বাড়ি ফেরার আনন্দ। দৃশ্যটি দেখতে ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে সরকারি নিষেধাজ্ঞার এই বিরতিকে জেলেরা উৎসবে পরিণত করেছেন। জেলে মো. রাফুল বলেন, আমাদের সবার বাড়ি হাতিয়া উপজেলায়। প্রায় চার মাস আমরা সাগরে মাছ শিকার করেছি। সাগরের ভেতরে কেমন সময় কাটিয়েছি, তা আল্লাহ আর আমরা ছাড়া কেউ জানে না। ঘূর্ণিঝড়ের সময় তো মনে হয়েছিল- হয়তো আর কেউই বাঁচব না, উদ্ধার হওয়ারও কোনো আশা ছিল না। তাই আজ ঘরে ফেরার আনন্দ আমাদের ভেতরে অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়েছে। সেই আনন্দকে ভাগাভাগি করতেই আমরা ট্রলার সাজিয়েছি, একই রকম পোশাক পরেছি। হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, এমভি আহাদ-২ ট্রলারটিকে নানাভাবে সজ্জিত করে ফিরছেন জেলেরা। তাদের সবার গায়ে একই ধরনের পোশাক, মুখে হাসি আর চোখে বাড়ি ফেরার আনন্দ। দৃশ্যটি দেখতে ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে সরকারি নিষেধাজ্ঞার এই বিরতিকে জেলেরা উৎসবে পরিণত করেছেন। মো. মামুন নামে এক জেলে বলেন, মাছ ধরতে আমার ভালোই লাগে। চার মাস সাগরে থেকে মাছ শিকার করে হাতে এসেছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এই টাকায় নতুন একটি জায়গা কিনেছি। নদী ভাঙনে আমাদের আগের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে, তাই নতুন জায়গা কেনা ছাড়া উপায় ছিল না। সরকার যদি হাতিয়ার নদীভাঙন রোধে উদ্যোগ নিত, তবে আমাদের মতো জেলেদের জীবন অনেক সহজ হতো। ট্রলারের মাঝি শুভ চন্দ্র দাস বলেন, আমি প্রায় এক দশক ধরে সাগরে মাছ ধরছি। আমাদের এমভি আহাদ-২ ট্রলারটির বয়স মাত্র চার বছর। এখানে আমরা ২১ জন জেলে মিলে রোজগারের সংগ্রাম চালাই। এই ট্রলারটিই আমাদের জীবনের ভরসা। শেষ দিনের ফেরা স্মরণীয় করে রাখতে বাড়ি ফেরার আগে আমরা পুরো ট্রলারটি সাজিয়েছি। সবাই একই ধরনের পোশাক পরেছি, যেন উৎসবের আবহ তৈরি হয়। আমাদের মালিক আরিফ মাঝিকেও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছি। এ আয়োজনের সব খরচ আমি নিজেই বহন করেছি। ট্রলারের মালিক মো. আরিফ মাঝি বলেন, আমি ট্রলারের মালিক হলেও একইসঙ্গে মাঝিও। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই জেলে পেশার সঙ্গেই আছি। আমাদের ২১ জন যেন একটা পরিবারের মতো। সবসময় একে অন্যের পাশে থাকি। এ বছর চার মাস সাগরে থেকে পেয়েছি প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ। যদিও গত বছর এই অঙ্ক ছিল প্রায় ৭০ লাখ। এবারে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। খরচ বাদে প্রতিজনের ভাগে আসবে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তারা সবাই খুশি হয়েছে, আর সেই আনন্দের প্রকাশেই আমরা ট্রলারটিকে সাজিয়েছি। ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, আজ জেলেদের বিদায়ের উৎসব, আর আগামীকাল থেকেই শুরু হবে ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের হালখাতা উৎসব। সাগর ফেরা জেলেরা অবসরের প্রথম চার-পাঁচ দিন ঘরে বসেই কাটান, কোনো কাজকর্ম করেন না। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা জাল ও নৌকা মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, পাশাপাশি সামলান সংসারের অন্যান্য কাজও। এই সময় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া হয়, আবার অনেকে সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিয়েশাদির আয়োজনও করেন। চেয়ারম্যান ঘাটের আড়ৎদার মাহবুবুল আলম ইউসুফ বলেন, আগে প্রচলিত ছিল, দীর্ঘসময় সাগরে মাছ শিকারের পর জেলেরা বাড়ি ফেরার পথে নৌকা বা ট্রলার সাজিয়ে ঘরে ফিরতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সেই রেওয়াজ আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবে এবার সেই ঐতিহ্য আবারও জীবন্ত করে তুলেছে এমভি আহাদ-২ ট্রলার। তাদের সাজসজ্জা দেখতে চেয়ারম্যান ঘাটে উপচে পড়েছে জনতার ভিড়। এমন রঙিন সাজে সজ্জিত ট্রলার দেখতে সত্যিই এক অন্যরকম আনন্দের অনুভূতি জাগে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে কঠোর নজরদারি থাকবে। মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালাবে। আশা করি নিষেধাজ্ঞা সফল হলে এরপর প্রচুর মাছ পাওয়া যাবে। মাছ পেলে জেলে ও সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবে।